মুনাজাতমূলক আয়াত

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK

মুনাজাত আরবি শব্দ। এর অর্থ পরস্পর চুপি চুপি কথা বলা। আদবের সাথে কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহ তা'আলার কাছে কোনো কিছু চাওয়া বা প্রার্থনা করাকে মুনাজাত বলে। আমাদের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন সবকিছুর জন্য আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট মুনাজাত করব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “ তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।' (সূরা আল-মু'মিন, আয়াত: ৬০) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন সম্পর্কে প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।' (তিরমিযি)

আল্লাহ তা'আলা আমাদের রব। তিনিই সবকিছু আমাদের দান করেন। দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত নিয়ামত তাঁরই দান। সুতরাং আমাদের উচিত তাঁরই কাছে সবকিছুর জন্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ তা'আলার নিকট কিছু চাওয়ার মাধ্যম হলো মুনাজাত করা। মুনাজাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের চাহিদা জানাতে পারি। আল কুরআনে মুনাজাতমূলক বহু আয়াত রয়েছে। এ পাঠে আমরা এরূপ তিনটি মুনাজাতমূলক আয়াত শিখব ও অর্থ জানব। এরপর এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নিকট মুনাজাত করব।

আয়াত ১

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।' (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ২৩)

সর্বপ্রথম এ মুনাজাত হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) করেছিলেন। আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) কে সৃষ্টি করে জান্নাতে বসবাস করার নির্দেশ দেন। জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে সকল নিয়ামত ভোগ করার অনুমতি দেন। শুধু একটি গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেন। কিন্তু আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) শয়তানের প্ররোচনায় ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলেন। তাঁদের এ কাজের জন্য মহান আল্লাহ তাঁদেরকে বেহেশত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেন। দুনিয়ায় এসে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন। তাঁরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে কান্নাকাটি করতে থাকেন। পরিশেষে আল্লাহ তা'আলা দয়াপরবশ হয়ে তাঁদের উপর্যুক্ত মুনাজাত শিক্ষা দেন। অতঃপর হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) এ মুনাজাতের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাঁদের দোয়া কবুল করেন এবং ক্ষমা করে দেন।

এ আয়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমরা নানারকম পাপ করে থাকি। আমরা আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করে থাকি। এমতাবস্থায় আমাদের উচিত অপরাধসমূহ স্বীকার করা। অতঃপর এ মুনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তা'আলা আমাদের প্রতি দয়া করবেন এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।

আয়াত ২

অর্থ: “হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ থেকে আমাদের প্রতি দয়া করো এবং আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করো।' (সূরা আল-কাহফ, আয়াত: ১০)

মুনাজাতটি আসহাবে কাহফের যুবকগণ করেছিলেন। আল্লাহ তা'আলা সূরা কাহফে তাঁদের ঘটনা ও মুনাজাত উল্লেখ করেছেন। আমাদের প্রিয়নবি (সা.)-এর আগমনের কয়েক শ বছর পূর্বের ঘটনা। দাকইয়ানুস নামক এক অত্যাচারী বাদশাহ ছিল। সে ইমানদারদের উপর খুব অত্যাচার করত। তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কয়েকজন যুবক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেন। তাঁদের সাথে একটি কুকুরও ছিল। তাঁদেরকে আসহাবে কাহফ বলা হয়। তাঁরা গুহাতে আল্লাহ তা'আলার ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। গুহায় থাকাবস্থায় তাঁরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে এ মুনাজাত করেন। আল্লাহ তা‘আলাও তাঁদের এ দোয়া কবুল করেন।

পুণ্যবান ব্যক্তিরা কখনোই আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত ত্যাগ করেন না। শত অত্যাচারেও তাঁরা যথাযথভাবে মহান আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকেন। এ জন্য প্রয়োজনে নিজেদের ঘরবাড়ি, দেশ ত্যাগ করতেও পিছপা হন না। আমরাও তাঁদের মতো আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত করব। কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত ছাড়ব না। বরং কোনো অসুবিধা দেখা দিলে আমরা মুনাজাতমূলক এ আয়াতটি পাঠ করে আল্লাহ তা'আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব। ফলে তিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন এবং আমাদের সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবেন।

আয়াত ৩

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।' (সূরা ত্বোয়া-হা, আয়াত: ২৫, ২৬, ২৭, ২৮)

মিসর দেশে ফিরাউন নামে এক বাদশাহ ছিল। সে ছিল খুবই অত্যাচারী, অহংকারী, দাম্ভিক এবং কুফরিতে চরমভাবে নিমজ্জিত। তার রাজ্য ছিল বিশাল এবং সৈন্য সংখ্যা ছিল অগণিত। বহু বছর ধরে তার শাসন চলে আসছিল। সে এতটাই দাম্ভিক ছিল যে, নিজেকে ‘সর্বোচ্চ প্রভু' বলে দাবি করত। আল্লাহ তা‘আলা হযরত মুসা (আ.) কে প্রেরণ করেন তার নিকট দ্বীন-ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। তখন মুসা (আ.) আল্লাহ তা‘আলার কাছে এই দোয়াটি করেছিলেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর দোয়া কবুল করেছিলেন। তাঁর বক্ষকে ইমান ও নবুয়াতের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন, তাঁর দ্বীন প্রচারের কাজকে সহজ করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর জিহ্বার জড়তাকে দূর করে দিয়েছিলেন, যাতে মানুষ তাঁর কথা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে।

আমরাও আল্লাহ তা'আলার নিকট দোয়া করব যেন তিনি আমাদের বক্ষকে ইমান, সৎকাজ ও জ্ঞানের জন্য প্রশস্ত করে দেন; লেখাপড়াসহ আমাদের সকল ভালো কাজকে সহজ করে দেন এবং আমাদের জিহ্বার জড়তাকে দূর করে দেন-যাতে আমরা সুন্দরভাবে মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারি, মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারি।

বাড়ির কাজ: শিক্ষার্থীরা মুনাজাতমূলক আয়াত তিনটি পড়ার টেবিলের সামনে ঝুলিয়ে রাখার জন্য সুন্দর করে লিখে একটি পোস্টার তৈরি করবে।
Content added By
Promotion